SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - খ্রিষ্টধর্ম শিক্ষা - অঞ্জলি ৩ | NCTB BOOK

সবার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করো। শিক্ষক তোমাকে জিজ্ঞেস করবেন যে তুমি কোন্ দিন, কোথায়, কাকে, কীভাবে, যেমন যে কোনো একজন ক্ষুধার্ত, পীড়িত, দুঃখী, বস্ত্রহীন, আশ্রয়হীন ব্যক্তিকে খাবার, আশ্রয়, সান্ত্বনা সেবা দিয়েছিলে। শিক্ষক তোমাকে তার একটি তালিকা তৈরি করতে বলবেন। সুন্দরভাবে তালিকাটি তৈরি করো। শিক্ষক হয়তো তোমাকে তোমার অনুভূতি ব্যক্ত করতে বলতে পারেন।

মানুষকে ভালোবাসা মানে ঈশ্বরকে ভালোবাসা

“মনুষ্যপুত্র সমস্ত স্বর্গদূতদের সঙ্গে নিয়ে যখন নিজের মহিমায় আসবেন তখন তিনি রাজা হিসাবে তাঁর সিংহাসনে মহিমার সঙ্গে বসবেন। সেই সময় সমস্ত জাতির লোকদের তাঁর সামনে একসঙ্গে জড়ো করা হবে। রাখাল যেমন ভেড়া আর ছাগল আলাদা করে তেমনি তিনি সব লোকদের দুভাগে আলাদা করবেন। তিনি নিজের ডান দিকে ভেড়াদের আর বাঁ দিকে ছাগলদের রাখবেন।

“এর পরে রাজা তাঁর ডান দিকের লোকদের বলবেন, ‘তোমরা যারা আমার পিতার আশীর্বাদ পেয়েছ, এসো। জগতের আরম্ভে যে রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে তার অধিকারী হও। যখন আমার খিদে পেয়েছিল তখন তোমরা আমাকে খেতে দিয়েছিলে; যখন পিপাসা পেয়েছিল তখন জল দিয়েছিলে; যখন অতিথি হয়েছিলাম তখন আশ্রয় দিয়েছিলে; যখন খালি গায়ে ছিলাম তখন কাপড় পরিয়েছিলে; যখন অসুস্থ হয়েছিলাম তখন আমার দেখাশোনা করেছিলে; আর যখন আমি জেলখানায় বন্দি অবস্থায় ছিলাম তখন আমাকে দেখতে গিয়েছিলে।'

“তখন সেই ঈশ্বরভক্ত লোকেরা উত্তরে তাঁকে বলবে, ‘প্রভু, আপনার খিদে পেয়েছে দেখে কখন আপনাকে খেতে দিয়েছিলাম বা পিপাসা পেয়েছে দেখে জল দিয়েছিলাম? কখনই বা আপনাকে অতিথি হিসেবে আশ্ৰয় দিয়েছিলাম, কিংবা খালি গায়ে দেখে কাপড় পরিয়েছিলাম? আর কখনই বা আপনাকে অসুস্থ বা জেলখানায় আছেন জেনে আপনার কাছে গিয়েছিলাম?”

“এর উত্তরে রাজা তখন তাদের বলবেন, ‘আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, আমার এই ভাইদের মধ্যে সামান্য কোনো একজনের জন্য যখন তা করেছিলে তখন আমারই জন্য তা করেছিলে।'

“পরে তিনি তাঁর বাঁ দিকের লোকদের বলবেন, ‘ওহে অভিশপ্ত লোকেরা, আমার কাছ থেকে তোমরা দূর হও। শয়তান এবং তার দূতদের জন্য যে চিরকালের আগুন প্রস্তুত করা হয়েছে তার মধ্যে যাও। যখন আমার খিদে পেয়েছিল তখন তোমরা আমাকে খেতে দাওনি; যখন পিপাসা পেয়েছিল তখন জল দাওনি; যখন অতিথি হয়েছিলাম তখন আশ্রয় দাওনি; যখন খালি গায়ে ছিলাম তখন আমাকে কাপড় পরাওনি; যখন অসুস্থ হয়েছিলাম এবং জেলখানায় বন্দী অবস্থায় ছিলাম তখন আমাকে দেখতে যাওনি।'

“তখন তাঁরা তাঁকে বলবে, ‘প্রভু, কখন আপনার খিদে বা পিপাসা পেয়েছে দেখে, কিংবা অতিথি হয়েছেন দেখে, কিংবা খালি গায়ে দেখে, কিংবা অসুস্থ বা জেলখানায় আছেন জেনে সাহায্য করিনি?”

“উত্তরে তিনি তাদের বলবেন, ‘আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তোমরা যখন এই সামান্য লোকদের মধ্যে কোনো একজনের জন্য তা করনি তখন তা আমার জন্যই করনি।”

তারপর যীশু বললেন, ,“এই লোকেরা অনন্ত শাস্তি পেতে যাবে, কিন্তু ঐ ঈশ্বরভক্ত লোকেরা অনন্ত জীবন ভোগ করতে যাবে।” মথি : ২৫ : ৩১-৪৬

তোমাকে একটু সহজ করে বলি

“মানবপুত্র” বা “রাজা” বলতে প্রভু যীশু নিজেকেই বুঝিয়েছেন। কিন্তু তিনি আমাদের পার্থিব জীবনের নয় বরং আধ্যাত্মিক জীবনের রাজা। প্রভু যীশু তাঁর ঐশ মহিমায় আবির্ভূত হয়ে সমস্ত মানুষের বিচার করতে এসেছেন। ধার্মিক অধার্মিক সকলেই এখন যীশুর সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ভ্রাতৃপ্রেমের মানদণ্ডে যীশু তাদের বিচার করবেন। অসহায় মানুষের সেবা করে ধার্মিকেরা তাঁরই সেবা করেছেন।

আর অসহায় মানুষকে ফিরিয়ে দিয়ে অধার্মিকেরা তাঁকেই ফিরিয়ে দিয়েছে। এই মহাবিচারের শেষ পরিণতি কী হবে? ধার্মিকেরা যাবে তাদের জন্যে চিরকাল থেকে প্রস্তুত করে রাখা সেই শাশ্বত জীবনধামে। তারা তো স্বর্গদূতদেরই মতো পরমপিতার আশীর্বাদের পাত্র। কারণ তারাই হলো ঈশ্বরের সেই প্রকৃত প্রীতিভাজন যারা একজন ক্ষুধার্তকে খাদ্য দিয়ে পরিতৃপ্ত করেছে, পীড়িতদের দিয়েছে সেবা, দুঃখী ও শোকার্তদের দিয়েছে সান্ত্বনা, বস্ত্রহীন কাউকে দেখে নিজের জামা খুলে দিয়েছে, আশ্রয়হীন ব্যক্তিকে দিয়েছে আশ্রয়। ।

এদিকে অধার্মিকেরা যাবে স্বয়ং শয়তানেরই সেই শাশ্বত দণ্ডলোকে। যাদের অন্তর ছিল কঠিন ও স্বার্থপরতায় পরিপূর্ণ। তারা শয়তানের মতো ঐশ অভিশাপের পাত্র।

পরবর্তী সেশনে বাইবেলে বর্ণিত “ক্ষমাশীল পিতা ও হারানো পুত্রের মন পরিবর্তন” গল্পটির উপর তোমরা শ্রেণিকক্ষে ভূমিকাভিনয় করবে। শিক্ষকের সহায়তায় অভিনয়ের চিত্রনাট্য তৈরি করে আনবে। ভূমিকাভিনয়ের পূর্বে চিত্রনাট্য তৈরির জন্য বাইবেলের সংশ্লিষ্ট গল্পটি মনোযোগ দিয়ে পড়বে। কে কোন চরিত্রে অভিনয় করবে তা নির্ধারণ কর। অভিনয়ের জন্য তুমি মানসিক ও সার্বিক ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আসবে। শিক্ষক তোমাদের প্রাসঙ্গিক video দেখাতে পারেন।

ভূমিকাভিনয়

ভূমিকাভিনয়ের জন্য চরিত্র ও পোশক-পরিচ্ছদ বেছে নাও। ভূমিকাভিনয়ের জন্য শ্রেণিকক্ষের সামনের দিকে একটু জায়গা করে নাও। যদি তোমাদের স্কুলে অডিটোরিয়াম/উন্মুক্ত মাঠ থাকে সেখানে অভিনয় করতে পারো।

ক্ষমাশীল পিতা, হারানো পুত্র ও কঠিন-হৃদয় ভাইয়ের উপমা-কাহিনী

তারপর যীশু বললেন, “একজন লোকের দু’টি ছেলে ছিল। ছোট ছেলেটি তার বাবাকে বলল, ‘বাবা, আমার ভাগের সম্পত্তি আমাকে দিন।' তাতে সেই লোক তাঁর দুই ছেলের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ করে দিলেন। কিছু দিন পরে ছোট ছেলেটি তার সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা-পয়সা নিয়ে দূর দেশে চলে গেল। সেখানে সে খারাপ ভাবে জীবন কাটিয়ে তার সব টাকা-পয়সা উড়িয়ে দিল। যখন সে তার সব টাকা খরচ করে ফেলল তখন সেই দেশের সমস্ত জায়গায় ভীষণ দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। তাতে সে অভাবে পড়ল। তখন সে গিয়ে সেই দেশের একজন লোকের কাছে চাকরি চাইল। লোকটি তাকে তার শূকর চরাতে মাঠে পাঠিয়ে দিল। শূকরে যে শুঁটি খেত সে তা খেয়ে পেট ভরাতে চাইত, কিন্তু কেউ তাকে তাও দিত না।

“পরে একদিন তার চেতনা হল। তখন সে বলল, ‘আমার বাবার কত মজুর কত বেশী খাবার পাচ্ছে, অথচ আমি এখানে খিদেতে মরছি। আমি উঠে আমার বাবার কাছে গিয়ে বলব, বাবা, ঈশ্বর ও তোমার বিরুদ্ধে আমি পাপ করেছি। কেউ যে আর আমাকে তোমার ছেলে বলে ডাকে তার যোগ্য আমি নই। তোমার মজুরদের একজনের মত করে আমাকে রাখ।'

“এই বলে সে উঠে তার বাবার কাছে গেল। সে দূরে থাকতেই তাকে দেখে তার বাবার খুব মমতা হল। তিনি দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিলেন। তখন ছেলেটি বলল, ‘বাবা, আমি ঈশ্বর ও তোমার বিরুদ্ধে পাপ করেছি। কেউ যে আর আমাকে তোমার ছেলে বলে ডাকে তার যোগ্য আমি নই।'

“কিন্তু তার বাবা তার দাসদের বললেন, ‘তাড়াতাড়ি করে সবচেয়ে ভাল জামাটা এনে ওকে পরিয়ে দাও। ওর হাতে আংটি ও পায়ে জুতা দাও, আর মোটাসোটা বাছুরটা এনে কাট। এস, আমরা খাওয়া-দাওয়া করে আনন্দ করি, কারণ আমার এই ছেলেটা মরে গিয়েছিল কিন্তু আবার বেঁচে উঠেছে; হারিয়ে গিয়েছিল পাওয়া গিয়েছে।' তারপর তারা আমোদ-প্রমোদ করতে লাগল।

“সেই সময় তাঁর বড় ছেলেটি মাঠে ছিল। বাড়ীর কাছে এসে সে নাচ ও গান-বাজনার শব্দ শুনতে পেল। তখন সে একজন চাকরকে ডেকে জিজ্ঞাসা করল, ‘এসব কি হচ্ছে?”

“চাকরটি তাকে উত্তর দিল, ‘আপনার ভাই এসেছে। আপনার বাবা তাকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেয়েছেন বলে মোটাসোটা বাছুরটা কেটেছেন।'

“তখন বড় ছেলেটি রাগ করে ভিতরে যেতে চাইল না। এতে তার বাবা বের হয়ে এসে তাকে ভিতরে যাবার জন্য সাধাসাধি করতে লাগলেন। সে তার বাবাকে বলল, ‘দেখ, এত বছর ধরে আমি তোমার সেবা-যত্ন করে আসছি; একবারও আমি তোমার অবাধ্য হই নি। তবুও আমার বন্ধুদের সঙ্গে আমোদ-প্রমোদ করবার জন্য তুমি কখনও আমাকে ছাগলের একটা বাচ্চা পর্যন্ত দাও নি। কিন্তু তোমার এই ছেলে, যে বেশ্যাদের পিছনে তোমার টাকা-পয়সা উড়িয়ে দিয়েছে, সে যখন আসল তুমি তার জন্য মোটাসোটা বাছুরটা কাটলে।”

“তার বাবা তাকে বললেন, ‘বাবা, তুমি তো সব সময় আমার সঙ্গে সঙ্গে আছ। আমার যা কিছু আছে সবই তো তোমার। খুশী হয়ে আমাদের আমোদ-প্রমোদ করা উচিত, কারণ তোমার এই ভাই মরে গিয়েছিল আবার বেঁচে উঠেছে; হারিয়ে গিয়েছিল আবার তাকে পাওয়া গেছে। ” লূক : ১৫ : ১১-৩২

তোমাকে একটু সহজ করে বলি

ছোট ছেলেটি নৈতিক মূল্যবোধ হারিয়ে তার বাবার অবাধ্য হয়েছে। নিজের ভুল বুঝতে পেরে সে যখন বাবার কাছে ফিরে এসেছে, তখন বাবা তাকে ক্ষমা করেছেন। এজন্য বড় ভাই ছোট ভাইয়ের সাথে হিংসা করেছে। বাবা বড় ছেলেকে বুঝিয়েছিলেন যে, অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরে এসেছে বলে ছোট ভাইকে নিয়ে বেশি আনন্দ করা উচিত।

সত্যের পক্ষে দীক্ষাগুরু যোহন

আজ তোমাদের এমন একজন ব্যক্তির কথা শিক্ষক জানাবেন, যিনি সত্যের স্বপক্ষে স্বাক্ষী দিয়েছেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। তাঁর নাম হলো সাধু যোহন। সাধু যোহন সম্পর্কে শিক্ষক তোমাদের প্রাথমিক সংক্ষিপ্ত ধারণা প্রদান করবেন।

হে সদাপ্রভু, তুমি আমাকে ভাল করে পরীক্ষা করে দেখেছ 

আর আমাকে জেনেছ। 

আমি যা কিছু করি তার সবই তো তুমি জান; 

তুমি দূর থেকেই আমার মনের চিন্তা বুঝতে পার। 

তুমি আমার কাজকর্ম ও বিশ্রামের বিষয় 

খুব ভাল করে খোঁজ নিয়ে থাক; 

তুমি আমার জীবন-পথ ভাল করেই জান। গীতসংহিতা ১৩৯ : ১-৩

 

হে ঈশ্বর, আমি চাই তুমি দুষ্টদের মেরে ফেল। 

ওহে রক্ত-পিপাসু লোকেরা, আমার কাছ থেকে দূর হয়ে যাও। 

মন্দ চিন্তা নিয়ে তারা তোমার বিষয়ে নানা কথা বলে; 

তোমার শত্রুরা বাজে উদ্দেশ্যে তোমার নাম নেয়। 

হে সদাপ্রভু, যারা তোমাকে অগ্রাহ্য করে 

আমি কি তাদের অগ্রাহ্য করি না? 

যারা তোমার বিরুদ্ধে ওঠে 

আমি কি তাদের ঘৃণার চোখে দেখি না? 

তাদের আমি সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করি; 

আমার শত্রু বলেই আমি তাদের মনে করি। 

হে ঈশ্বর, তুমি আমাকে ভাল করে পরীক্ষা করে দেখ, 

আর আমার অন্তরের অবস্থা জেনে নাও; 

আমাকে যাচাই করে দেখ,

আর আমার দুশ্চিন্তার কথা জেনে নাও। 

তুমি দেখ আমার মধ্যে এমন কিছু আছে কি না যা দুঃখ দেয়; 

তুমি আমাকে অনন্ত জীবনের পথে চালাও। গীতসংহিতা ১৩৯ : ১৯-২৪

যীশুর সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল বলে রাজা হেরোদ যীশুর কথা শুনতে পেয়েছিলেন। কোন কোন লোক বলছিল, “উনিই সেই বাপ্তিস্মদাতা যোহন। তিনি মৃত্যু থেকে বেঁচে উঠেছেন বলে এই সব আশ্চর্য কাজ করছেন।”

কেউ কেউ বলছিল, “উনি এলিয়”; আবার কেউ কেউ বলছিল, 

“অনেক দিন আগেকার নবীদের মত উনিও একজন নবী।”

এই সব কথা শুনে হেরোদ বললেন, “উনি যোহন, যাঁর মাথা কেটে 

ফেলবার আদেশ আমি দিয়েছিলাম। আবার উনি বেঁচে উঠেছেন।”

এই ঘটনার আগে হেরোদ লোক পাঠিয়ে যোহনকে ধরেছিলেন এবং তাঁকে বেঁধে জেলে রেখেছিলেন। হেরোদ তাঁর ভাই ফিলিপের স্ত্রী হেরোদিয়ার জন্যই এটা করেছিলেন। হেরোদ হেরোদিয়াকে বিয়ে করেছিলেন বলে যোহন বারবার হেরোদকে বলতেন, “আপনার ভাইয়ের স্ত্রীকে বিয়ে করা আপনার উচিত হয় নি।” এইজন্য যোহনের উপর হেরোদিয়ার খুব রাগ ছিল। সে যোহনকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল, কিন্তু হেরোদ যোহনকে ভয় করতেন বলে সে তা করতে পারছিল না। যোহন যে একজন ঈশ্বরভক্ত ও পবিত্র লোক হেরোদ তা জানতেন, তাই তিনি যোহনকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতেন। যোহনের কথা শুনবার সময় মনে খুব অস্বস্তি বোধ করলেও হেরোদ তাঁর কথা শুনতে ভালোবাসতেন।

শেষে হেরোদিয়া একটা সুযোগ পেল। হেরোদ নিজের জন্মদিনে তাঁর বড় বড় রাজকর্মচারী, সেনাপতি ও গালীল প্রদেশের প্রধান লোকদের জন্য একটা ভোজ দিলেন। হেরোদিয়ার মেয়ে সেই ভোজসভায় নাচ দেখিয়ে হেরোদ ও ভোজে নিমন্ত্রিত লোকদের সন্তুষ্ট করল।

তখন রাজা মেয়েটিকে বললেন, “তুমি যা চাও আমি তোমাকে তা-ই দেব।” হেরোদ মেয়েটির কাছে শপথ করে বললেন, “তুমি যা চাও আমি তা-ই তোমাকে দেব। এমন কি, আমার রাজ্যের অর্ধেক পর্যন্তও দেব।”

মেয়েটি গিয়ে তার মাকে বলল, “আমি কি চাইব?”

তার মা বলল, “বাপ্তিস্মদাতা যোহনের মাথা ।"

মেয়েটি তখনই গিয়ে রাজাকে বলল, “একটা থালায় করে আমি এখনই বাপ্তিস্মদাতা যোহনের মাথাটা চাই।”

এই কথা শুনে রাজা হেরোদ খুব দুঃখিত হলেন, কিন্তু ভোজে নিমন্ত্রিত লোকদের সামনে শপথ করেছিলেন বলে মেয়েটিকে ফিরিয়ে দিতে চাইলেন না। তিনি তখনই যোহনের মাথা কেটে আনবার জন্য একজন জল্লাদকে হুকুম দিলেন। সেই জল্লাদ জেলখানায় গিয়ে যোহনের মাথা কেটে একটা থালায় করে তা নিয়ে আসল। রাজা সেটা মেয়েটিকে দিলে পর সে তা নিয়ে গিয়ে তার মাকে দিল। এই খবর পেয়ে যোহনের শিষ্যেরা এসে তাঁর দেহটা নিয়ে গিয়ে কবর দিলেন। মার্ক ৬ : ১৪-২৯

তোমাকে একটু সহজ করে বলি

দীক্ষাগুরু সাধু যোহন ছিলেন যীশুর অগ্রদূত। তিনি মরুপ্রান্তরে এই বাণী ঘোষণা করেছেন; তোমরা প্রভুর আসার পথ প্রস্তুত কর এবং সহজ সরল করে তোল তোমাদের চলার পথ। তিনি বনের মধু, পশুর লোমের কাপড় ও পঙ্গপাল খেয়ে অতি সাধারণ জীবন-যাপন করতেন। সত্যকে “সত্য” এবং মিথ্যাকে “মিথ্যা” বলে; সত্যের সপক্ষে সাক্ষী দিয়েছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। সত্যের সপক্ষে সাক্ষী এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার ফলে তাঁকে মৃত্যুবরণ করতে হয়।

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনেও এমন অনেক সময় উপস্থিত হয়। যখন আমরা সত্যের সপক্ষে সাক্ষী দিতে পারি। অন্যায় দেখে আমরা অনেক সময় প্রতিবাদ করি না। আমরা ভয় পাই, পরে যদি আমার উপর কোনো বিপদ এসে পড়ে! তাই সত্য বলার সাহস আমাদের থাকতে হবে। দীক্ষাগুরু সাধু যোহন আমাদের অনুপ্রাণিত করেন যাতে আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া অনৈতিক, অপ্রীতিকর, মিথ্যা ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ ও সত্যের সপক্ষে সাক্ষী দেই।

বাড়ির কাজ

শিক্ষক তোমাদের অষ্টকল্যাণবাণী অনুসরণ করে কীভাবে ক্ষমাশীল, দয়ালু, শান্তিকামী ও সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে পারো তা নিয়ে বাড়ির কাজ বুঝিয়ে দিবেন। ক্ষমাশীল হতে, দয়ালু হতে, শান্তিকামী ও সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে যা যা করতে পারো তা তোমরা লিখবে। একে বলে কর্মপরিকল্পনা। কর্মপরিকল্পনা তৈরি সহজ করতে নিচের প্রশ্নগুলো শিক্ষক তোমাদের দিবেন।

প্রশ্নগুলো হলো :

যীশুর অষ্টকল্যাণ বাণী থেকে কোনটি তোমার বেশি ভালো লেগেছে? যেটি বেশি ভালো লেগেছে সেটির আলোকে দুটি কাজ করে পরবর্তী শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করবে।

প্রতিবেশী ও ভাইয়ের সেবা করার মধ্য দিয়ে আমরা ঈশ্বরের সেবা করতে পারি, যীশুর এ বাণীর আলোকে দুটি কাজ করে প্রতিবেদন লিখ। কখন, কোথায়, কার জন্য ও কীভাবে করেছ তা বর্ণনা কর।

তুমি কি কখনো সত্যের সপক্ষে সাক্ষী দিয়েছ? যদি দিয়ে থাকো তবে বর্ণনা করো। আর যদি না হয় তবে চেষ্টা করো এরকম একটি কাজ করতে এবং পরবর্তী সেশনে তা উপস্থাপন করো।

শিক্ষক তোমাকে বলবেন পরবর্তী সেশনে কর্মপরিকল্পনাটি শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করতে।

Content added By